Malda Mankora Kali puja: মহা বলিদানে এখানে ঝুঁকে পড়েন দেবী! কাহিনী শুনলে চোখ কপালে উঠবে

Story of Malda Mankora Kali puja definitely surprise you: মাতৃ শক্তি বা নারী শক্তির এক অন্যতম অংশ হলো মা কালী। মূলত শক্তির দেবীরূপে আরাধনা করা হয় মহাকালীকে। বিভিন্ন অমাবস্যা তিথিতে বিভিন্ন স্থানে মা কালীর পূজা হয়। তবে আসন্ন ভূত চতুর্দশী অমাবস্যা তিথিতে প্রতি জায়গায় মায়ের বিশেষ পূজার আয়োজন করা হয়। পূর্ব কাহিনী অনুসারে জানা যায়, প্রাচীনে তন্ত্র সাধকরা ও ডাকাতরা শ্মশানে মা কালীর আরাধনা করতেন।

পরবর্তী সময়ে অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় মা কালীর মূর্তি পূজার প্রচলন শুরু করেন বলে কথিত রয়েছে। আর সেই সময় থেকেই মা কালীর আরাধনা বাংলার বহু জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে মা কালীর মূর্তি পূজার বিভিন্ন কাহিনী রয়েছে। যা শুনলে শরীর কেঁপে ওঠে। তেমনি শরীরে শিহরণ জাগায় মালদার মানকোড়া কালীপূজার (Malda Mankora Kali puja) কাহিনী। শোনা যায়, বলির সময় সামনের দিকে নুইয়ে পড়েন দেবী। জানুন হাড় হিম করা এই জাগ্রত কালীর মাহাত্ম্য।

মালদা মানকোড়া কালীর (Malda Mankora Kali puja) ইতিহাস

কথিত রয়েছে, প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন মানকোরার এই জাগ্রত কালী। কোথায় অবস্থিত এই কালী মন্দির? জানা যায় পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার হাবিবপুর থানার অন্তর্গত জাজইল গ্রাম পঞ্চায়েতের মানকোড়া এলাকায় স্থাপিত এই মানকোড়া কালী মন্দির। এই কালীপূজা নিয়ে রয়েছে নানান কাহিনী। শোনা যায় ৩০০ বছর পূর্বে জঙ্গলে আবৃত মানকোড়া এলাকায় ডাকাতরা পূজা করতেন মানকোড়া কালীর। পুর্নভবা নদী পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে মায়ের কাছে পূজা নিবেদন করতে আসতেন ডাকাতরা। আবার রাতের অন্ধকারে নিজেদের জায়গায় ফিরে যেতেন।

তবে সময়ের পরিবর্তনে এই মানকোড়া কালীপূজা ডাকাতদের থেকে জমিদারদের হাতে আসে। ব্রিটিশ সময়কালে মানকোড়া এলাকায় বসতি স্থাপন হলে সেখানকার জমিদারের দ্বারা মানকোড়া জঙ্গলে ওই কালীর বেদি আবির্ভাব হয়। আর সেই বংশ পরম্পরায় জমিদারদের হাতে তখনকার সময়ে ওই কালীপূজা হতো। তবে বর্তমানে জমিদার প্রথা উঠে যাওয়ায় মানকোড়া কালীপূজা গ্রামীণ কালীপূজা হয়ে উঠেছে। গ্রামবাসীদের উদ্যোগে ডাকাতদের নিয়ম মেনে এই পূজা হয়। জ্বালানো হয় মশাল। স্থানীয় গ্রামবাসীদের থেকে জানা যায়, মা খুবই জাগ্রত। ভক্তদের ডাকে সাড়া দেন তিনি।

মায়ের কাছে মনস্কামনা জানানো

স্থানীয় লোকমুখে শোনা যায়, মালদার মানকোড়া কালী (Malda Mankora Kali puja) ঠাকুর খুবই জাগরিত। মূলত ভক্তদের বিশ্বাসে এই পূজা এখনো চলে আসছে। আর যাই হয়ে যাক মায়ের প্রতি ভক্তদের বিশ্বাসে কিন্তু একটুও চির ধরেনি। মায়ের কাছে ভক্তি ভরে পূজা দিয়ে যা মানত করা হয় তা পূরণ করেন মা মানকোড়া কালী। শুধু সেই গ্রামবাসী নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই দিন মায়ের কাছে মনস্কামনা নিয়ে পূজা দিয়ে যান। এদিন গোটা গ্রামবাসী নিরামিষ খেয়ে থাকেন। শুধু তাই না, গ্রামের যেকোনো পরিবারে যেকোনো অনুষ্ঠান হলে তার আগে মায়ের কাছে পূজা নিবেদন করা হয়। মশাল জ্বালিয়ে পূর্বপ্রথা মেনে পূজা হয় মায়ের।

মানকোড়া কালীর মহিমা

মালদার এই মানকোড়া কালী (Malda Mankora Kali puja) কতটা জাগ্রত তা নিয়েও রয়েছে এক কিংবদন্তি। মানকোড়া গ্রামের এই পূজার এক প্রাক্তন সম্পাদক জানান, পূর্বে একসময় এক শাঁখারী সেই গ্রামে শাঁখা বিক্রি করতে আসেন। সেই শাঁখারীর থেকে একজোড়া শাখা পড়েন একটি মেয়ে। টাকা কে দেবে? শাঁখারী জিজ্ঞাসা করলে মেয়েটি বলেন, তাঁর বাবা। যিনি মন্দিরের সেবায়ত। পরবর্তীতে শাঁখারী সেই সেবায়েতের কাছে গিয়ে শাঁখার দাম চাইলে সেবায়ক বলেন যে, তার তো কোনো মেয়ে নেই তাহলে কে শাঁখা পড়ল? এই বলতে বলতে তিনি পাশের পুকুরে জলে একটি মেয়েকে দুই হাত উঁচু করে থাকতে দেখতে পান। তৎক্ষণাৎ তিনি বুঝতে পারেন এই মেয়ে আর কেউ নয় স্বয়ং মানকোড়া কালী। বোঝার সাথে সাথেই তিনি সেই শাঁখার দাম মিটিয়ে দেন।

শুধু তাই না, এই কালীর এতই মহিমা যে তিনি নিশি রাতে পূজা চলাকালীন বলির সময় কেঁপে উঠে নীচের দিকে নুইয়ে পড়েন বলে শোনা যায় সেখানকার স্থানীয় লোকমুখে। তার জন্য পূজার আগে দেবী মূর্তি শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার প্রচলন ছিল। তবে বর্তমানে বলির সময় মায়ের মুখ ঢেকে দেওয়া হয়। বর্তমানে এই পুজোকে কেন্দ্র করে সাত দিন ধরে গ্রামের মানুষ আনন্দ উৎসবে মেতে থাকে। সাত দিন ধরে চলে মেলা, পুজোর রাতে হয় পাঁঠা বলি, তবে পূর্বে মোষ বলি হত।