Yamraj: মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল স্বয়ং যমকেও; অবাক হলেও এটাই সত্যি

Lord Yama himself had to die: মৃত্যু এমন একটি জিনিস যা জীবনের চরম সত্য। মৃত্যুকে ভয় পেলেও মৃত্যুর সবার জীবনেই আসে। স্বয়ং যমকেও মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। আজকের প্রতিবেদনে এমন একটি পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কে আমরা জেনে নেব। কোনো এক সময়ে যমুনা নদীর তীরের একটি গ্রামে অমৃত নামের এক ঈশ্বরভক্ত মানুষ বাস করত। তবে তার খুবই মৃত্যুভয়ে ছিল। তার গভীর বিশ্বাস ছিল যমরাজকে (Yamraj) খুশি করতে পারলে মৃত্যুকে জয় করা সম্ভব। তার জন্য সে কঠোর তপস্যা করেছিল। দীর্ঘ তপস্যার পর যমরাজকে সে সন্তুষ্ট করে এবং তাকে যমরাজ বলেন ‘জীবদ্দশায় আমার দেখা কেউ পায় না। তুমি পেয়েছ। বলো, কী চাও?’

অমৃত উত্তরে বলে যে সে মৃত্যুকে জয় করতে চায় কিন্তু যম (Yamraj) বললেন, মৃত্যু হল জীবনের এমন একটি সত্যি যার থেকে কারো মুক্তি নেই। যে জন্মগ্রহণ করে তাকে মরতেই হবে কিন্তু অমৃতর ইচ্ছার কথা মাথায় রেখে তাকে যমরাজ একটি প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। মৃত্যু আসন্ন বোঝানোর জন্য যমরাজ অমৃতকে চারটি চিঠি পাঠাবে। সেই চিঠিগুলি পাওয়ার পর নিজেকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত করার সময় পাবে সে।

যমরাজের কাছ থেকে এই বর পেয়ে অমৃত নিজের ধর্মকে ত্যাগ করে বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে শুরু করে কারণ তার কোন বিষয়ে আর চিন্তা নেই। তিনি নিশ্চিন্ত হলেন, মৃত্যুর আগাম ইঙ্গিত যমরাজের কাছ থেকে তিনি নিশ্চয়ই পাবেন। অমৃত তোর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলে পাক ধরতে শুরু করল। পরবর্তী সময়ে তাঁর দাঁতও পড়ে গেল এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে আসা শুরু হল। একেবারে বৃদ্ধ বয়সে এসে অমৃত অচল হয়ে পড়ল। কিন্তু তখনও তাঁর কাছে যমরাজের কোনও চিঠি এসে পৌঁছল না।

অমৃতর সামনে একদিন হঠাৎ যমদূত এসে হাজির হলে সে বুঝতে পারে তার মৃত্যু আসন্ন। যমদূতের সঙ্গে তিনি চললেন পরলোকে। যমরাজের (Yamraj) প্রতি মনে একরাশ খুব নিয়ে তাকে প্রশ্ন করে মৃত্যুর আগে চারটি চিঠি পাঠানোর কথা ছিল তাকে কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি চিঠিও পাঠানো হয়নি। যমরাজের সামনে উপস্থিত হয়ে সে তাকে নানাভাবে প্রশ্ন করতে থাকে। ‘আপনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন, মৃত্যুর আগে চারটি চিঠি পাঠাবেন। কিন্তু আপনি তা করেননি। কথা রাখেননি আপনি।’

যমরাজ তার প্রশ্নে হেসে বলেন যে, তুমি মূর্খ তাই বুঝতে পারোনি আমি তোমাকে কখনোই হাতে-কলমে চিঠি লিখে পাঠানোর কথা বলিনি। আসলে তোমার শরীরই ছিল আমার কাগজ, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তোমার শারীরিক পরিবর্তনগুলো ছিল আমার কলম, আর সময় ছিল আমার বার্তাবাহক। তোমাকে চারটি চিঠি পাঠানোর যে কথা দিয়েছিলাম তা আমি পালন করেছি। তোমার চুল পেকে যাওয়ার ঘটনা ছিল আমার প্রথম চিঠি। তোমার দাঁত পড়ে যাওয়ার ঘটনা হল আমার দ্বিতীয় চিঠি। যখন তোমার দৃষ্টিশক্তি কমে আসা শুরু হল, তখন তুমি পেলে আমার তৃতীয় চিঠি। আর চতুর্থ চিঠিটি তুমি পেয়েছিলে, যখন তুমি পঙ্গু হয়ে গেলে। কিন্তু তুমি এতটাই মূর্খ যে একটা চিঠিরও পাঠোদ্ধার করতে পারোনি।

আরো পড়ুনঃ আজ কোন রাশির ভাগ্যে কি লেখা আছে, জেনে নিন এখনি!

পুরাণের যম-অমৃতের কাহিনি খুবই জনপ্রিয় এবং এর থেকেই যম ও মৃত্যু সম্পর্কে মানুষের একটি ধারণা জন্মেছে। মহাভারত ও পুরাণে যমকে বর্ণনা করা হয়েছে ঘোর কৃষ্ণবর্ণ, রক্তবসন পরিহিত এবং মহিষারূঢ় রূপে। শুধু হিন্দু ধর্মে যে যমরাজকে (Yamraj) বিশ্বাস করা হয় এমনটা না। কৃষ্ণের যেমন অষ্টোত্তর নাম রয়েছে তেমন যমেরও অনেক নাম। যেমন— কালান্তক, অন্তক, কৃতান্ত, শমন, সংযম, দণ্ডধর, কাল ইত্যাদি। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবেন বিভিন্ন দেশে এবং সভ্যতায় যে আমরা আজকে বিভিন্ন নামে ও রূপে পাওয়া যায়।

ঋগ্বেদে অবশ্য যম আর পুরাণের যম কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। ঋগ্বেদে যম ও যমী নামের যমজ ভাইবোনের উল্লেখ করা রয়েছে। যম-যমী কাহিনী বেদে উল্লেখিত হলেও এর আসল উৎস হলো ইন্দো-ইরানীয় ভাষার লোকপুরাণ যিম ও যিমেহর (Yima and Yimeh) কাহিনি থেকে। সেখানেও যিম এবং যিমেহ যমজ ভাইবোন। ঋগ্বেদের বলা হয়েছে যম কিন্তু মর্তবাসী তাই তার মৃত্যুও স্বাভাবিক। বেদের যুগে যম মৃত্যুর দেবতায় পরিণত হয়নি। ভারতীয় লোকপুরাণে তাকে মানুষ হিসাবে স্বীকৃতি দান করা হয়েছে।