Mahasnan: প্রতিবিম্বে ভেসে ওঠেন মহামায়া, মহাস্নানের পর জেগে ওঠে দেবী

Goddess wakes up after great Mahasnan: দেখতে দেখতে দুর্গা পূজার একটি দিন কেটে গেল। রাত শেষ হলেই মহাসপ্তমী। এই সপ্তমীর সকালেই দেবীর জাগরণের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে দুর্গা পূজা। যাকে শাস্ত্রের ভাষায় মহাস্নান বলা হয়। আসলে বছরে দেবী দুর্গার দুইবার পুজো করা হয়। একবার বসন্তকালে, আর একবার শরৎকালে। আর এই শরৎকালের দুর্গা পূজা শারদীয়া নামে পরিচিত। এই সময় উত্তরায়ন থাকার কারণে দেবীর নিদ্রাকাল। তাই পুজোর আগে দেবীকে জাগ্রত করতে হয়, যাকে বোধন বলা হয়।

দুর্গা পূজার দিনে একটি বিশেষ রীতি হলো মহাস্নান (Mahasnan)। যাকে দুর্গা স্নানও বলা হয়। এই বিশেষ রীতি মহাসপ্তমীর দিন সকালে পালন করা হয়। কোনো কোনো জায়গায় আবার অষ্টমী বা নবমীর দিনেও মহাস্নান করানো হয়। মহাসপ্তমীর দিন ভোরে প্রথমে নব পত্রিকা স্নান করানো হয়। নবপত্রিকা আসলে দেবী উমার নয় রূপ। এই নবপত্রিকা কলা বউ নামেও পরিচিত। কলা স্নানের পর মহামায়ার মহাস্নান করানো হয়।

মহাস্নানের বিশেষ রীতি রয়েছে। মহাস্নান (Mahasnan) করানোর সময় একটি আয়না বা একটি পাত্রে জল নিয়ে দেবীর মূর্তির সামনে রাখা হয়। এই জলে বা আয়নায় ভেসে উঠে দেবীর প্রতিবিম্ব। দেবীর এই প্রতিবিম্বকে নানা সামগ্রী দিয়ে স্নান করানো হয়। শাস্ত্রে দেবীর স্নানের দাঁত মাজারও উল্লেখ রয়েছে। আট আঙ্গুল সরু বেলকাঠ দিয়ে দেবীর দাঁত মাজাতে হয়। এমনকি কুলকুচি করার জন্য গরম জল নিবেদন করতে হয়। স্নানের পূর্বে দেবী গায়ে তেল ও হলুদ মাখেন। দেবীকে গঙ্গা জল দিয়ে মহাস্নান করানো হয়। এছাড়াও শামুখের থেকে নির্গত জল অর্থাৎ শঙ্খজলেও মাকে মহাস্নান করানো যায়।

নবকুমার ভট্টাচার্য লিখিত ‘দুর্গাপুজোর জোগাড়’ গ্রন্থে দেবী দুর্গার মহাস্নানের জন্য ৩৬ জিনিসের উল্লেখ করা হয়েছে। এই ৩৬টি জিনিস হলো-
তৈল হরিদ্রা, শঙ্খ জল, গঙ্গা জল, উষ্ণোদক, দধি, তিলতেল, বিষ্ণুতেল,পুষ্পোদক, ফলোদক, ঘৃত,শুদ্ধ জল, পঞ্চগব্য, মধু, কুশোদক,সর্বৌষধি, মহৌষধি, পঞ্চকষায়, বৃষ্টি জল, সরস্বতী নদীর জল, বেশ্যাদ্বার মৃত্তিকা, নদীর উভয় কুল মৃত্তিকা, গঙ্গা মৃত্তিকা,দুগ্ধ, নারিকেলোদক, ইক্ষুরস, শিশিরোদক, রাজদ্বারের মৃত্তিকা,সাগরোদক,, পদ্মরেণু মিশ্রিত জল, গন্ধোদক, চতুস্পথ মৃত্তিকা, বৃষশৃঙ্গ মৃত্তিকা, গজদন্ত মৃত্তিকা, সর্বতীর্থের মৃত্তিকা, নির্ঝরোদক, সর্বতীর্থের জল।

সপ্তমীর দিন সকালে নবপত্রিকা স্নানের (Mahasnan) পর মহাস্নান করানোর মাধমে উমাকে জাগ্রত করা হয়। তবে মাটির মূর্তি যাকে নষ্ট না হয় বা অক্ষুন্ন থাকে তাই মায়ের প্রতিবিম্বকে স্নান করানো হয়। তবে যে সব স্থানে মূর্তি ধাতু নির্মিত সেই সব স্থানে প্রতিবিম্ব নয় বরং মূর্তিকেই স্নান করানো হয়। এমনিতে তমার কিংবা মাটির পাত্রে দর্পন রেখে দেবীকে স্নান করানো হয়। দর্পনে দেবীর প্রতিবিম্ব পড়লে দেবীর স্নান সম্পন্ন হয়।