Holika Dahan: হোলিকা দহনের পরই পালিত হয় দোল উৎসব! কেন এমন নিয়ম? জানুন হোলিকা দহনের পুরকথা

Know the legend of Holika Dahan festival: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। তেমনই অন্যতম একটি উৎসব হল দোল বা হোলি। যে উৎসবের মাধ্যমে রঙের ছটায় রাঙিয়ে যায় আকাশ বাতাস। তবে এই উৎসবের ঠিক আগের দিনেই পালিত হয় এক অন্যতম উৎসব যার নাম হোলিকা দহন (Holika Dahan)। ফাল্গুনী পূর্ণিমায় পালিত হয় এই উৎসব। তবে এই উৎসব ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন নামে পরিচিত। কোথাও চাঁচড় পোড়া কোথাও বুড়ি পোড়া কোথাও ন্যাড়াপোড়া তো কোথাও হোলিকা দহন। কিন্তু দোলের আগেই কেন পালন করা হয় এই হোলিকা দহন উৎসব? এর পিছনের গল্প জানেন কি? জানতে হলে প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

বাঙালির কাছে হোলি যেমন প্রেমের উৎসব হিসেবে পরিচিত, তেমনি এই দিনটি অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির উদযাপনের দিন হিসেবেও পরিচিত। কারণ এই দিনের পূর্ব দিনে ভগবান বিষ্ণুর দ্বারা হোলিকা দহনের মাধ্যমে অশুভ শক্তির পরাজয় হয় এবং আগমন ঘটে শুভ শক্তির। কিভাবে হয়েছিল এই হোলিকা দহন (Holika Dahan)?

কথিত রয়েছে, পূর্বে অসুর রাজ হিরণ্যকশিপুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে প্রজাবর্গ। তিনি নিজেকে ঈশ্বর মনে করে প্রজাদের অন্যান্য দেব-দেবীদের পুজো পাঠ, ধর্মের প্রতি ভক্তি সমস্ত কিছু বন্ধ করে দেন। ফলে তাঁর ভয়ে কোনো প্রজাই ধর্মচরণ বা দেবতাদের আরাধনা করতে পারত না। অপরদিকে আবার ব্রহ্মার তপস্যা করে ব্রহ্মাকে প্রসন্ন করে অমরত্ব লাভ করেন রাক্ষস রাজ। ব্রহ্মার থেকে তিনি পাঁচটি বর পান। ব্রহ্মা তাঁকে বর দেন যে হিরণ্যকশিপুর দিনে বা রাতে, ঘরের ভিতরে বা বাইরে, জল-মাটি-শূন্য, কোনো অস্ত্র-শস্ত্র দ্বারা মৃত্যু হবে না। কোন, প্রাণীর দ্বারাও মৃত্যু ঘটবে না রাক্ষস রাজার।

আরো পড়ুনঃ প্রতি সোমবার শিব পূজা করেন? সঠিক নিয়মে পূজা না করলেই অতিষ্ঠ হতে পারে জীবন

ব্রহ্মার বর পেয়ে তিনি আরো হিংস্র হয়ে ওঠেন। নিজের পুত্র প্রহ্লাদকে হত্যা করতে ছাড়ে না তিনি। কারণ রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত। যা মানতে পারছিলেন না অসুর রাজ। যার ফলে সে তাঁর পুত্রকে হত্যা করার জন্য পরামর্শ নেন হোলিকার। ইনি হলেন অসুর রাজার বোন অর্থাৎ প্রহ্লাদের পিসি। হোলিকা ফন্দি আঁটেন প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনের মধ্যে বসার। হোলিকা ভেবেছিল ব্রহ্মার দেওয়া রক্ষাকবচ শাল দিয়ে তিনি নিজেকে আগুন থেকে রক্ষা করে নিতে পারবেন। অপরদিকে সেই আগুনে পুড়ে ছাই হবে প্রহ্লাদ। কিন্তু ঘটল বিপরীত ঘটনা। প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে বসা মাত্রই বিষ্ণুর কৃপায় হোলিকার শাল প্রহ্লাদের গা স্পর্শ করে। যার ফলে প্রহ্লাদ সুরক্ষিত থাকে এবং আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় হোলিকা। এতে অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটে এবং শুভ শক্তির জয় হয়। আর সেই সময় থেকেই শুরু হয় হোলিকা দহন।

আরো পড়ুনঃ দেবগুরু বৃহস্পতির থেকেও শক্তিশালী তিনি! তবে কেন দৈত্যগুরু হওয়ার সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন শুক্রাচার্য?

ঐতিহাসিক মতে, হোলিকা দহন (Holika Dahan) উৎসবের সূচনা হয় প্রহ্লাদপুরী মন্দিরে। যা অবস্থিত পাঞ্জাবের মুলতান অঞ্চলে। শোনা যায় আদিম শবর জাতির সাথে যুক্ত রয়েছে এই ন্যাড়া পোড়া বা চাঁচড়ের উৎসব। দেশের বহু রাজ্যে এই হোলিকা দহন উৎসব ঘিরে হোলিকার কুশ পুতুল পোড়ানো হয়। আবার বহু জায়গায় আগুন জ্বালানো হয়। তাতে বাচ্চারা বিভিন্ন ধরনের জিনিস চুরি করে হোলিকা দহনের আগুনে পোড়ায়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে চলতি বছরে হোলিকা দহন উৎসব পালিত হবে ২৪শে মার্চ ২০২৪, রবিবার।