Kali Puja unique story: মৃন্ময়ী মূর্তির পরিবর্তে দেবীর আসনে বসেন বাড়ির গৃহবধূ! জানুন সাঁতরা পরিবারের কালীপূজার রহস্য

Know the unique story of Kali Puja of Santara family: সমাজে নারী শক্তির বা নারীদের যে আলাদা স্থান রয়েছে তা প্রমাণ করে নানান পৌরাণিক কাহিনী। পুরাণ মতে, অসুরের হাত থেকে এই জগতকে যে রক্ষা করেছিলেন তিনিও একজন নারী, দেবী দুর্গা। ফলে সমাজে নারীর স্থান সবকিছুর ঊর্ধ্বে। কিন্তু বর্তমানে প্রদর্শিত হচ্ছে নারীর স্থান পুরুষদের পদতলে। মৃন্ময়ী দেবীদের নারী হিসেবে পূজা করা হলেও মানুষরূপী দেবীদের কিন্তু সেই সম্মান দেওয়া হয় না। তবে ব্যতিক্রম বাঁকুড়ার ইন্দাসের মির্জাপুর গ্রামের এই পরিবার। যে পরিবার মৃন্ময়ী মূর্তি নয়, স্বয়ং মানুষরূপী দেবীর আরাধনা করেন কালীপূজায়। জানুন এই কালী পূজার আশ্চর্যজনক কিংবদন্তি (Kali Puja unique story)।

ইতিহাস বলছে, প্রাচীন যুগে সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। সমাজে মহিলাদের স্থান ছিল সব কিছুর উর্ধ্বে। উদাহরণস্বরূপ ইতিহাসে খোদিত রয়েছে গার্গী মৈত্রেয়ী প্রমুখ নারীদের নাম। কিন্তু মধ্যযুগ অন্য কথা বলছে। সেই সময়ে সমাজ পুরুষতন্ত্রে হস্তান্তরিত হয়েছিল। মহিলাদের ঠাঁই ছিল পুরুষদের পদতলে। তবে পরবর্তীতে আধুনিক ভারতে মহিলাদের স্থান কোথায়? তা এক ঘটনার মাধ্যমে সকলের কাছে তুলে ধরেন শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।

ঐতিহাসিক কাহিনী অনুসারে জানা যায়, শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ফলহারিনী কালীপূজায় ষোড়শী জ্ঞানে পূজা করেন মা সারদা দেবীকে। সালটা ছিল ১৮২০ বঙ্গাব্দের ১৩শে জৈষ্ঠ। তবে বর্তমানে সামাজিক ব্যবস্থা তার বিপরীতমুখী। সম্ভবত ব্যতিক্রম রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার ইন্দাসের মির্জাপুর গ্রামের সাঁতরা পরিবার। যে পরিবারে দীপান্বিতা কালীপূজায় গৃহবধূকে দেবী সাজে সাজিয়ে দেবীর আসনে বসিয়ে নিয়ম নিষ্ঠা মেনে পূজা করা হয়। কালীপূজার এই অদ্বিতীয় রীতি কিভাবে সৃষ্টি (Kali Puja unique story)?

মানুষরূপী কালী পূজার অনন্য কাহিনী (Kali Puja unique story)

বাঁকুড়া জেলার ইন্দাসের মির্জাপুর গ্রামের সাঁতরা পরিবারের সদস্যদের থেকে জানা যায়, সাঁতরা পরিবারের বড় বউ হীরারাল সাঁতরাকে দীপান্বিতা কালীপূজায় দেবীর আসনে বসিয়ে পূজা করা হয়। বহু প্রাচীন এই মানুষরূপী কালী পূজার রীতি। প্রায় ১২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই প্রথা মেনে আসা হচ্ছে। এই পূজা কিভাবে সৃষ্টি তা পরিবারের সকলের কাছেই অজ্ঞাত। তবে তারা এটুকুই জানে যে তাদের পরিবারে মাটির মূর্তি পূজা নিষিদ্ধ। যদি অষ্টধাতু বা পিতলের প্রতিমা পূজা করতে পারে তবেই প্রতিমা পূজা সম্ভব হবে। তা না হলে বাড়ির বড় বৌমাকে দেবী হিসেবে আরাধনা করা হবে।

প্রায় সাত পুরুষ ধরে এই পূজার রীতি মেনে আসা হচ্ছে বলে জানা যায়। পূর্বে তালপাতার ছাউনি দিয়ে গৃহবধূর পূজা হতো। তবে পরবর্তীতে মন্দির স্থাপন হয় আর সেখানেই নিয়ম নিষ্ঠা মেনে বাড়ির বড় বৌমা হীরালাল সাঁতরাকে পূজা করা হয়।

কালী পূজার আয়োজন

নিয়ম অনুসারে প্রতি বছর ভূত চতুর্দশী অমাবস্যা তিথিতে সাতরা পরিবারের বড় বৌমা হীরালাল সাঁতরাকে দেবীর বস্ত্র পরিয়ে, গলায় জবার মালা পরিয়ে দেবী সাজে সজ্জিত করে ভক্তি ভরে আরাধনা করা হয়। বিবাহের পর ৩৮ বছর বয়স থেকে তিনি দেবী রূপে পূজা হয়ে আসছেন। দেবী রূপে তার অনুভূতি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ওই সময়ের অনুভূতি তিনি কাউকে বলে বোঝাতে পারবেন না। এ সময় তার কোনো বাহ্যিক জ্ঞান থাকেনা।