Maa Kali: নেই কোনও মূর্তি, ৫০০ বছর ধরে গভীর জঙ্গলে হয় কালী পুজো

Maa Kali has been worshiped for 500 years without any idol: আগামী ১২ ই নভেম্বর সারা বাংলা জুড়ে অনুষ্ঠিত হবে মা কালীর পুজো। মা কালীর মাহাত্যের কথা কারো অজানা নয়। বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে দেবীর মাহাত্ম্যের নানা কাহিনী। আজ এই প্রতিবেদনে এমন একটি কালীপুজোর কথা বলব যা দীর্ঘ ৫০০ বছর ধরে নিজের ঐতিহ্যকে সমান তালে বজায় রেখে আজও এগিয়ে চলেছে। এই পুজোটি আসলে বর্ধমান জেলার কাঁকসার রাজকুসুমের বনকালী দেবীর পুজো। আসলে এই পুজোটি ওই অঞ্চলের বর্ধিষ্ণু রায় পরিবারের পুজো। কালীপুজোর পরের দিন গভীর জঙ্গলে দিনের আলো থাকতে থাকতেই সেরে ফেলা হয় এই পুজো। আর এই রীতিতে চলে আসছে গত ৫০০ বছর ধরে (Maa Kali)।

রায় পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায় বর্তমানে যে গভীর জঙ্গলে মায়ের পুজো হয় সেখানে আগে মানুষের বসতি ছিল। সেই বসতির কিছু কিছু চিহ্ন আজও বর্তমান। বর্তমানে অঞ্চলটি জঙ্গলে পরিণত হলেও একইভাবে দীর্ঘ এতগুলি বছর ধরে চলে আসছে এই পুজো। এই পুজোর বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য হলো পুজো করার জন্য এখানে দেবী কালীর কোনো মূর্তি বা পাথর কিছুই নেই। কালীপুজোর পরের দিন সকালে জঙ্গলের একটি মহুয়া গাছের নিচে ঘট বসিয়ে দেবীর পুজো সেরে ফেলা হয়। বর্ধমান জেলা সহ পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর অঞ্চল থেকেও প্রচুর পরিমাণে ভক্ত পুজোর দিন এসে উপস্থিত হন। এবং দিনের আলো থাকতে থাকতেই পুজো সম্পন্ন করে জঙ্গল থেকে প্রত্যেকে চলে যান (Maa Kali)।

রায় পরিবারের এক সদস্যের কথা থেকে জানা যায় দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে প্রায় ৩০০ বছর আগে এই পুজো শুরু করেন গোপালপুরের ভট্টাচার্য পরিবার। তাদের গৃহে বনকালী মা পূজিত হন বড় মা কালী রুপে। পুজোর দিন রায় পরিবারের তরফ থেকে নৈবেদ্য নিয়ে ভট্টাচার্য পরিবারে যাওয়া হয়। সেখানে পুজো শেষ হলে জঙ্গলে বনকালীর পুজো শুরু হয়। যদিও অনুমান করা হয় যেহেতু রায় পরিবার ক্ষত্রিয় তাই ভট্টাচার্য পরিবারের কোনো ব্রাহ্মণকে দিয়ে এই পুজো করানো হতো। গভীর জঙ্গলে হিংস্র জীবজন্তুর ভয় থাকায় এই পুজো ধীরে ধীরে শুরু হয় ভট্টাচার্য বাড়িতে। কিন্তু জঙ্গলের পুজো ও একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। ভট্টাচার্য পরিবারের পুজো সমাপ্ত হওয়ার পর দিনের আলোতে পুজো করা হতো জঙ্গলে।

এই পুজোর বিষয়ে রায় পরিবারের গৃহিণী আলপনা রায় বলেন তাদের রায় পরিবারের বংশধর বর্তমানে ৩৩ টি পরিবার। আগে জঙ্গলের পুজোর সময় তারা অর্থাৎ পরিবারের মহিলারা সকালে উপস্থিত থাকতে পারতেন না (Maa Kali)। কারণ ওই সময় রান্নাবান্নার সময়। তবে এই রীতি বর্তমানে পরিবর্তিত হয়েছে। তার কথায় “২০০৭ সালে প্রতিটি পরিবার ওই দিনে একত্রিত হতে আমরা পুজো শেষে একটা খাওয়াদাওয়ার আয়োজন শুরু করি”। বর্তমানে এই রায় পরিবারের ২০০ জন সদস্য প্রত্যেকেই এই পুজোর দিন এখানে উপস্থিত থাকেন। এবং একইভাবে ঐতিহ্যের সঙ্গে একই নিয়ম মেনে এই পুজো আজও হয়ে চলেছে।